প্ৰাণ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - বাংলা সাহিত্য কবিতা | - | NCTB BOOK
315
315

মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে,

মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই ।

এই সূর্যকরে এই পুষ্পিত কাননে

জীবন্ত হৃদয়-মাঝে যদি স্থান পাই !

ধরায় প্রাণের খেলা চিরতরঙ্গিত,

বিরহ মিলন কত হাসি-অশ্রু-ময়-

মানবের সুখে দুঃখে গাঁথিয়া সংগীত

যদি গো রচিতে পারি অমর-আলয় !

তা যদি না পারি, তবে বাঁচি যত কাল

তোমাদেরি মাঝখানে লভি যেন ঠাঁই,

তোমরা তুলিবে বলে সকাল বিকাল

নব নব সংগীতের কুসুম ফুটাই ।

হাসি মুখে নিয়ো ফুল, তার পরে হায়

ফেলে দিয়ো ফুল, যদি সে ফুল শুকায় ॥

Content added By

কবি পরিচিতি

244
244

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ২৫শে বৈশাখ ১২৬৮ বঙ্গাব্দে (৭ই মে ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দ) কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর। বাল্যকালে রবীন্দ্রনাথকে ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নর্মাল স্কুল, বেঙ্গল একাডেমি প্রভৃতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার জন্য পাঠানো হলেও তিনি বেশিদিন স্কুলের শাসনে থাকতে পারেননি । এমনকি সতেরো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথকে ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য ইংল্যান্ডে পাঠানো হলেও দেড় বছর পরে পড়াশোনা অসমাপ্ত রেখে তিনি দেশে ফিরে আসেন। বিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা তিনি লাভ করেননি, কিন্তু সাহিত্যের বিচিত্র ক্ষেত্রে তাঁর পদচারণা এক বিস্ময়ের বস্তু । তিনি ছিলেন প্রকৃত অর্থেই অসামান্য প্রতিভাধর । বাল্যেই তাঁর কবিপ্রতিভার উন্মেষ ঘটে। মাত্র পনেরো বছর বয়সে তাঁর বনফুল কাব্য প্রকাশিত হয়। ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ গীতাঞ্জলি কাব্যের জন্য এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। বস্তুত তাঁর একক সাধনায় বাংলা ভাষা ও সাহিত্য সকল শাখায় দ্রুত উন্নতি লাভ করে এবং বিশ্বদরবারে গৌরবের আসনে প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি একাধারে সাহিত্যিক, দার্শনিক, শিক্ষাবিদ, সুরকার, নাট্য প্রযোজক ও অভিনেতা । কাব্য, ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, গান ইত্যাদি সাহিত্যের সকল শাখাই তাঁর অবদানে সমৃদ্ধ । তাঁর অজস্র রচনার মধ্যে মানসী, সোনার তরী, চিত্রা, কল্পনা, ক্ষণিকা, বলাকা, পুনশ্চ, চোখের বালি, গোরা, ঘরে বাইরে, যোগাযোগ, শেষের কবিতা, বিসর্জন, ডাকঘর, রক্তকরবী, গল্পগুচ্ছ, বিচিত্র প্রবন্ধ ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ২২শে শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দে (৭ই আগস্ট ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দ) কলকাতায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ।

Content added By

শব্দার্থ ও টিকা

238
238

সূর্য করে - সূর্যের কিরণে। চিরতরঙ্গিত – সর্বদা কল্লোলিত, বহমান। লভি – লাভ করি। জীবন্ত হৃদয় মাঝে- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর রচনায় মানুষের মাঝে বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন । আলোচ্য অংশে তাঁর এই আকাঙ্ক্ষার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। বিরহমিলন ... অশ্রুময়- মানুষের জীবন কুসুমাস্তীর্ণ নয়। হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা নিয়ে তার জীবন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মানব জীবনের এই বৈচিত্র্যের মধ্যে স্থান করে নিতে চেয়েছেন। আর তার সৃষ্টির মধ্যে ফলিয়ে তুলতে চেয়েছেন যাপিত জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার বিপুল এক আখ্যান। অমর আলয় -অমর সৃষ্টি অর্থে। নব নব সঙ্গীতের কুসুম ফুটাই – রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির জগৎ বিপুল। মানুষের জীবনের বিচিত্র অনুভব-অনুভূতি, ভাব-ভাবনা ও কর্মের জগৎকে তিনি তাঁর সৃষ্টির মধ্যে প্রাণময় করে তুলতে চেয়েছেন। তাঁর সেই সৃষ্টির মধ্য থেকে রূপ-রস-গন্ধ যেন মানুষ অনুভব করতে পারে, তার জন্য তিনি প্রতিনিয়ত ফুটিয়ে তুলছেন সৃষ্টির কুসুম ।
 

Content added By

পাঠ পরিচিতি

214
214

কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কড়ি ও কোমল কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে। এই জগৎ সুন্দর এবং আকর্ষণীয়। মানুষের হাসি-কান্না, মান-অভিমান, আবেগ-ভালোবাসায় পৃথিবী পরিপূর্ণ। জগতের মায়া ত্যাগ করে অন্য কিছুর আহ্বানে প্রলুব্ধ হয়ে কবি তাই মৃত্যুবরণ করতে চান না। তিনি অভিলাষ ব্যক্ত করেছেন, মানুষের মনজয়ী রচনা সৃজনের মাধ্যমে সবার কাছে আদৃত হওয়ার। পৃথিবীর নরনারীর সুখ-দুঃখ-বিরহ যদি ঠিকভাবে তাঁর সৃষ্টিতে ঠাঁই পায়, তবেই তিনি অমর হবেন । তা-না হলে তাঁর রচনা শুকনো ফুলের মতোই সবার কাছে অনাদৃত হয়ে পড়বে। সৎ ও শুভকর্ম করে জগতে মানুষের মধ্যে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার জন্য দৃঢ় সংকল্প প্রয়োজন। কবিতাটিতে এ প্রত্যয়ই প্রতিফলিত হয়েছে । জীবন তো একবারই । জীবনে নেতিবাচকতা পরিহারপূর্বক মহামানবের পদচিহ্ন অনুসরণ করে জীবনপাঠের দীক্ষা কবিতাটিতে উচ্চকিত হয়েছে।
 

Content added By
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion
;